Breaking News
Welcome to my blog

Tuesday, November 11, 2014

মা দিবস এবং আমার না বলা কিছু কথা ।

আমার এই জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয় আমার মা৤
আজকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার ১১ তারিখ মা দিবস । এই মা দিবসে অনেকে মাকে নিয়ে অনেক কিছু লিখছেন আলোচনা করছেন বিভিন্ন মিডিয়ায় । ফেইসবুকে মায়ের সাথে ছবি তুলে আপলোড করছেন অনেকে । আমার কাছে এবারের মা দিবসটি কেমন জানি শুকনো আর শুন্যবোধ হচ্ছে । কারণ বিগত ৩১ শে অক্টোবর আমার মা দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় লিভার ক্যান্সারে ভোগার পর আমাদের ছেড়ে চলে যান চিরতরে । সেই সাথে আমাকে 'মা' নামক একটি শব্দের আবেগীয় উচ্চারণ থেকে সারাজীবনের জন্য বঞ্চিত করে যান । জানি আমি আর কখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ 'মা' এর উচ্চারণ করতে পারবো না । মোবাইলে শুনতে পাবো না আর একটি অতি পরিচিত প্রিয় কণ্ঠস্বর। এটা ভাবলে বুকে এক পাথরের চাপ অনুভূত হয় । বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি । তন্ময় হয়ে যায় হঠাত্‍ করে । কি ভাবি সেটাও জানি না । এখন আমার এমবিএ পরীক্ষা চলছে । প্রতি পরীক্ষায় মা আমার জন্য অষ্টশীল(বিকালে উপবাস থাকা) পালন করতেন যাতে আমি সুস্থ ও ভালোভাবে পরীক্ষাটা দিতে পারি । পরীক্ষার হল থেকে বের হলে প্রথমেই মাকে ফোন দিতাম আর মা জানতে চাইত পরীক্ষা কেমন দিয়েছি । প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে মা ফোন দিয়ে খোঁজ নিতেন মশারী টানিয়েছি কিনা ।
ঠিকমত খাচ্ছি কিনা ঘুমাচ্ছি কিন । এখন আর এভাবে কেউ খবর নেই না। আমাকেও আর পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে রিপোর্ট করতে হয় না কেমন পরীক্ষা দিয়েছি । মায়ের কত ইচ্ছে ছিল আমাকে এমএ পাশ দেখার । কিন্তু সেটা দেখার তার সময় হলো না সেশনজট এবং ক্যান্সারের কারণে। মা যখন আমার কোলে ক্যান্সারের সাথে লড়তে লড়তে হেরে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন তখনও আমার বিশ্বাস হয়নি যে মা আর আমাদের মাঝে নেই । মনে হচ্ছিল মা ঘুমিয়ে পরেছেন । ঘুম থেকে উঠেই আবার কমলার জুস খেতে চাইবেন । আমাকে ডাকবেন জুস বানিয়ে দিতে । তাই আমার কান্না আসেনি তখন । এর অনেকদিন পরে কেঁদেছি । কাঁদতে কাঁদতে এখন আর কান্না আছে না তাই কাঁদি না শুধু কথা বলতে পারিনা মায়ের কথা মনে পড়লে। কেমন জানি বুকটা ভারি লাগে শুধু । ইদানিং একটা বিষয় লক্ষ্য করছি নিজের মধ্যে সেটি হচ্ছে কারো মৃত্যুর খবর আমাকে আর তেমন আলোড়িত করে না । কেন জানি মনে হয় ঠিকই হয়েছে ।
এটাই তো হওয়ার কথা ছিল । তাই নিজেকে নিজের কাছেই অপরিচিত লাগে । মাঝে মাঝে ভাবি- আমি কি অস্বাভাবিক হয়ে গেছি ? পরীক্ষা শেষ হলে বাড়িতে যাব । জানি না কিভাবে থাকব বাড়িতে মাকে ছাড়া । প্রতিবার যখন বাড়িতে যায় তখন পুরো যাত্রাপথ মা ফোন দিতেন পাঁচ দশ মিনিট পর পর । আমার জন্য স্পেশাল কিছু আয়োজন করতেন বাড়িতে । যে ক'টা দিন বাড়িতে থাকতাম সারাদিন এমনকি মাঝ রাত পর্যন্ত মায়ের সাথে কথা বলতাম বিভিন্ন বিষয়ে । মা আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ এবং অতুলীয় নিরাপদ বন্ধু ছিল । সবকিছু অকপটে মায়ের সাথে শেয়ার করতাম । মায়ের মৃত্যুর পর এই ক'টা মাসে অনেক কথা জমা হয়ে গেছে । কিন্তু বাড়িতে গেলে কার সাথে সেসব শেয়ার করবো ভেবে পাচ্ছি না । জীবনের সুন্দর ছন্দময় কবিতাটা হঠাত্‍ করে কিভাবে যে দুর্বোধ্য গদ্য হয়ে গেল বুঝার কথা দূরে ভাবতেই পারিনি । তবুও জীবন চলবে প্রকৃতির নিয়মে জীবনের পথেই । মা আমার সাথে এখন শারীরিকভাবে আর নেই কিন্তু জীবন চলার প্রতিটি পরতে পরতে আমার সমগ্র চিন্তাজগতে থাকবেন যতদিন বেঁচে থাকবো এই পৃথিবীতে । মা তুমি যেখানেই থাকো তোমার পায়ের ধূলায় আমার নতমস্তকের শ্রদ্ধা রেখে দিয়ে ধন্য করিও তোমার এই অভাগা এতিম ছেলেটিকে ।

No comments:

Post a Comment

Designed By Published.. Blogger Templates