আমার এই জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয় আমার মা |
আজকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার ১১ তারিখ মা দিবস । এই মা দিবসে অনেকে মাকে
নিয়ে অনেক কিছু লিখছেন আলোচনা করছেন বিভিন্ন মিডিয়ায় । ফেইসবুকে মায়ের সাথে
ছবি তুলে আপলোড করছেন অনেকে । আমার কাছে এবারের মা দিবসটি কেমন জানি শুকনো
আর শুন্যবোধ হচ্ছে । কারণ বিগত ৩১ শে অক্টোবর আমার মা দীর্ঘ দুই বছরের
অধিক সময় লিভার ক্যান্সারে ভোগার পর আমাদের ছেড়ে চলে যান চিরতরে । সেই
সাথে আমাকে 'মা' নামক একটি শব্দের আবেগীয় উচ্চারণ থেকে সারাজীবনের জন্য
বঞ্চিত করে যান । জানি আমি আর কখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ 'মা' এর উচ্চারণ
করতে পারবো না । মোবাইলে শুনতে পাবো না আর একটি অতি পরিচিত প্রিয় কণ্ঠস্বর।
এটা ভাবলে বুকে এক পাথরের চাপ অনুভূত হয় । বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি । তন্ময়
হয়ে যায় হঠাত্ করে । কি ভাবি সেটাও জানি না । এখন আমার এমবিএ পরীক্ষা চলছে
। প্রতি পরীক্ষায় মা আমার জন্য অষ্টশীল(বিকালে উপবাস থাকা) পালন করতেন
যাতে আমি সুস্থ ও ভালোভাবে পরীক্ষাটা দিতে পারি । পরীক্ষার হল থেকে বের হলে
প্রথমেই মাকে ফোন দিতাম আর মা জানতে চাইত পরীক্ষা কেমন দিয়েছি । প্রতিরাতে
ঘুমানোর আগে মা ফোন দিয়ে খোঁজ নিতেন মশারী টানিয়েছি কিনা ।
ঠিকমত খাচ্ছি
কিনা ঘুমাচ্ছি কিন । এখন আর এভাবে কেউ খবর নেই না। আমাকেও আর পরীক্ষার হল
থেকে বের হয়ে রিপোর্ট করতে হয় না কেমন পরীক্ষা দিয়েছি । মায়ের কত ইচ্ছে ছিল
আমাকে এমএ পাশ দেখার । কিন্তু সেটা দেখার তার সময় হলো না সেশনজট এবং
ক্যান্সারের কারণে। মা যখন আমার কোলে ক্যান্সারের সাথে লড়তে লড়তে হেরে গিয়ে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন তখনও আমার বিশ্বাস হয়নি যে মা আর আমাদের মাঝে নেই ।
মনে হচ্ছিল মা ঘুমিয়ে পরেছেন । ঘুম থেকে উঠেই আবার কমলার জুস খেতে চাইবেন ।
আমাকে ডাকবেন জুস বানিয়ে দিতে । তাই আমার কান্না আসেনি তখন । এর অনেকদিন
পরে কেঁদেছি । কাঁদতে কাঁদতে এখন আর কান্না আছে না তাই কাঁদি না শুধু কথা
বলতে পারিনা মায়ের কথা মনে পড়লে। কেমন জানি বুকটা ভারি লাগে শুধু । ইদানিং
একটা বিষয় লক্ষ্য করছি নিজের মধ্যে সেটি হচ্ছে কারো মৃত্যুর খবর আমাকে আর
তেমন আলোড়িত করে না । কেন জানি মনে হয় ঠিকই হয়েছে ।